spot_imgspot_img

একজন সফল উদ্যোক্তা ও লোকহৈতষীর গল্প…

মাইকেল ব্লুমব্রাগ একজন উদ্যোক্তা,ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং একজন লোক-হিতৈষী মানুষ। ২০১৮ সালের ফ্রোব’স ওয়ার্ল্ড’স বিলিনিয়ার্স লিস্ট অনুযায়ী মাইকেল হলেন পৃথিবীর ১১তম ধনী মানুষ।

ব্লুমব্রাগ এলপি এবং ব্লোমব্রাগ ফিলান্থ্রোপিস এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন মাইকেল ব্লুমব্রাগ ।পরপর তিনবার তিনি ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ছিলেন। এক কথায়  এমন কোন জায়গা ছিল না যেখানে মাইকেল ব্লুমব্রাগ এর পদচারনা বা প্রভাব ছিল না।

কিন্তু প্রতিটি সাফল্যের পেছনেই থাকে কঠিন পরিশ্রম ও একাগ্রতার এক দীর্ঘ পথের ইতিহাস। মাইকেল ব্লুমব্রাগ ও এর ব্যতিক্রম নন।

১৯৪২ সালের ভ্যালেন্টাইনে অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি বোস্টনে জন্ম  নেন এই লিজেন্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় জন্ম নেয়া মেইকেলের পরিবার ছিল নিতান্তই মধ্যবিত্ত। ব্যাংক লোন নিয়ে ও কার পার্কিংলটে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ মেটান তিনি। হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে তিনি হার্ভার্ড বিসনেস স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন। এরপর খুবই সামান্য বেতনে একদম এন্ট্রি লেভেলের  আইটি ফার্মে একটা চাকরিও যোগার করে ফেলেন তিনি। এত কষ্টের পর চাকরি পেয়েও তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারন তার স্বপ্ন ছিল সবার থেকে নিজেকে আলাদা ভাবে তৈরি করার। সমাজের আর দশ জনের মধ্যে নিজেকে তুলে ধরার ইচ্ছাই তাকে ভিন্ন কিছু করার জন্য পেরণা দেয়।

যে ফার্মে তিনি কাজ করছিলেন, হুট করে একদিন সেই ফার্মটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮১ সালে চাকরি হারানোর পর মাইকেল নিজেই একটি ইনফরমেশন টেকনোলজির কোম্পানি দেবার চিন্তা করেন। যাতে করে ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটিস কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আরো বেশি স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হয়। সেই ভাবনা থেকেই মাত্র একটি রুমের মধ্যে ‘ইনোভেটিভ মার্কেট সল্যুশন’ নামের নিজের একটি কোম্পানি খুলে বসেন মাইকেল। সে যে শুরু করলেন মাইকেল আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে ‘ইনোভেটিভ মার্কেট সল্যুশন’ থেকে ব্লুমব্রাগ এলপি নামে আত্মপ্রকাশ করে মাইকেলের কোম্পানিটি এবং এতই বেশি সাফল্য লাভ করে যে মাত্র নয় বছরে  অর্থাৎ ১৯৮৯ সালের মধ্যে এই কোম্পানির মুল্য দাড়ায় ২ বিলিয়ন।

এরপর পর্যায়ক্রমে মাইকেল অন্য ব্যবসায়র দিকে মন দেন যেমন   মিডিয়াতে আত্মপ্রকাশ করেন  ব্লুমব্রাগ নিউজ এবং ব্লুমব্রাগ টিভি নিয়ে।

বর্তমানে মাইকেল ব্লুমব্রাগ এলপি একটি বৈশ্বিক কোম্পানি। এই কম্পানিতে প্রায় ১৫,৫০০ জন মানুষ কাজ করেন এবং বিশ্বের ৭৩ টি দেশে এর অফিস আছে।

২০০১ সালে তিনি ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতে আগ্রহী হন।২০০২ সালে তিনি নিউইয়র্ক সিটির ১০৮ তম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।

বিলিনিয়র মাইকেল ব্লুমব্রাগ তার ১২ বছরের মেয়র জীবনে মাত্র ১ ডলার করে বছরে পারিশ্রমিক নিতেন।

তিনি এই ১২ বছরে (২০০২-২০১৩) তার ইনোভেটিভ চিন্তা-চেতনা ও জনসেবা মনোভাব নিয়ে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। তিনি নিউইয়র্কের ভেঙ্গে পরা শিক্ষা ব্যাবস্থার অনেক উন্নতি করেন। তিনি অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি পুরাতন ইন্ডাস্ট্রিয়াল  এরিয়া কাজে লাগিয়ে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ভুমিকা রাখেন।

মাইকেল  এর বিসনেস পদ্ধতি ইউইয়র্কের অনেক প্রাইভেট  প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সাহায্য করে।

মেয়রের দায়িত্ব পালন শেষেও তিনি নানা দান করেন ও জনসেবামূলক কাজ চালিয়ে যান। এমনকি জনসেবা করাই তার পরবর্তি ক্যারিয়ারের মূল লক্ষ্য হয়ে দাড়ায়।

তিনি ৫ বিলিয়নের বেশি দান করেন  গান কন্ট্রোল, ক্লাইমেট চেঞ্জ ও অনান্য সামাজিক কাজে ।

মাইকেল একবার নিউইয়র্কের কোরনেল ইউনিভার্সিটিতে ১০০ মিলিয়ন ডলার উপহার হিসেবে দেন। তিনি তার আধুনিক চিন্তা চেতনা দিয়ে সমাজ ও মানুষের উন্নতিতে তার অর্জিত সম্পদ ব্যয় করতে কখনও কুন্ঠা বোধ করেননি।

আমেরিকার ইতিহাসে মাইকেলই প্রথম মানুষ যিনি জীবদ্দশায় সবচেয়ে বেশি দান করেন স্কুলখাতে।  তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দান করেন জন হপকিনস স্কুলে, যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ইউএস ডলার।

এছাড়াও  তিনি ৪২ মিলিয়ন ডলার দান করেন শুধু মাত্র দেশের মিনিউসিপাল সমস্যার সমাধানের জন্য।

সবশেষে বলতে হয়  মাইকেল ব্লুমব্রাগ একজন  সফল  উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। একজন জনদরদী রাজনীতিবিদ, যিনি তার আয়ের বেশির ভাগ অংশই দান করেন যাচ্ছেন নানা খাতে।

উদ্যোক্তা হতে হলে তার জীবনাদর্শন অনেকাংশেই অনুকরণীয় ও শিক্ষণীয়।

 

 

Get in Touch

spot_imgspot_img

Related Articles

spot_img

Latest Posts