spot_imgspot_img

এসএমই দিবস ২০২০ : করোনার নির্মমতার শিকার এসএমই খাত

কোভিড-১৯, বৈশ্বিক মহামারি বা করোনা ভাইরাস যে নামেই ডাকেন না কেন এর উল্টোপাশের ভয়াবহতার ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণের হয়তো শুরু আছে কিন্তু আপাতত শেষ নেই। ব্যক্তি বা সামাজিক জীবনের আঘাতের নির্মমতার কাছে হেরে যিনি বিদায় নিচ্ছেন আদতে তিনি হয়তো বেঁচে যাচ্ছেন। কিন্তু জীবিত মানুষ মুখোমুখি হচ্ছেন প্রায় মৃত্যুর। বেঁচে থাকার ৫টি মৌলিক চাহিদা পূরণে যে অর্থ, মানসিক ও শারীরিক শক্তির প্রয়োজন সেখানেই হারের শুরু।

শুধু অর্থের বিচারেই করোনার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। কম পুঁজি বা অর্থ দিয়ে যে জীবন বা অর্থনীতি চলে করোনার কঠিন ধাক্কাটা ঠিক সেখান দিয়েই গেছে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট বা মাঝারি শিল্পের (এমএসএমই) নারী ও তরুণ উদ্যোক্তারাই এর চরম নির্মমতার শিকার। বলা হয়ে থাকে, বড়’র ছায়াতলে ছোটরা বাঁচে। কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং প্রায় সব সেক্টরেই মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা কমে যাওয়ায় ছোট’র অস্তিত্ব এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে।

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির মেরুদণ্ডই হচ্ছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই এটি। জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর স্মল বিজনেস (আইসিএসবি) বলছে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের আওতায় পরে। সেই হিসেবে মোট কর্মসংস্থানের ৭০ শতাংশের যোগানদাতা এই খাত এবং জিডিপি’র ৫০ শতাংশও আসে এখান থেকেই। সোজা বাংলায় বলাই যায়, করোনার কোপ পড়েছে অর্থনীতির মেরুদণ্ডে।

আসা যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। এসএমই ফাউন্ডেশনের হিসেবে, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা প্রায় ১০ লাখ। তবে ঘরে বসেও পণ্য তৈরি করেন এমন উদ্যোক্তাদের ধরলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭৮ লাখ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ৬০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা রয়েছেন।

বছরে বাংলাদেশে উৎসব কেন্দ্রীক কেনাবেচাই হয় প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ, দুই ঈদ ছাড়াও ইদানিং দিবস কেন্দ্রীক উৎসবেও সামিল হয় মানুষ। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকেই পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে থাকে। সেই সঙ্গে প্রায় সব সেক্টরে পণ্যের চাহিদা চলে যায় তলানিতে। ফলে অর্থনীতির প্রাণ এই খাত মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। তাই, সংখ্যার বিচারে কমবেশি হলেও এসএমই খাত দিয়ে বেঁচে থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনেরটা এখন অন্ধকার নাকি ধূসর সে প্রশ্ন উঠলেও তার উত্তর এই মুহূর্তে যে কারো কাছে নেই তা বলাই বাহুল্য।

এসএমইকে বাঁচানো মানেই দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানো। সে লক্ষ্যে সরকার এসএমই খাতের সহায়তায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে শুরুতেই। কিন্তু উদ্যোক্তা বা ব্যাংকার দুই পক্ষই এ নিয়ে এখনো বিপাকে। কারণ, আপদকালীন এই ঋণ আদায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় ঋণ নিতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। অর্থাৎ আদায় না হওয়ার শংকা থেকেই এখনো ঋণ দেওয়াই শুরু করেনি ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর হালনাগাদ এক হিসেবে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসএমইখাতকে ঋণ দিয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের মোট ব্যাংকঋণের ৭৭ শতাংশই বিতরণ করেছে এসএমইতে।

তবে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় ঋণ দেওয়া মানে এর বড় অংশই আদায় না হওয়ার ভয় আছে। আর ঋণ আদায় না হলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংক পড়বে ঝুঁকিতে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই এতে মূল ভূমিকা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এসএমই ঋণ খেলাপির সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এ খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানই ঘুরে দাঁড়তে পারবে। যদিও ব্যাংকখাতে সব ঋণের জন্যই খেলাপি ঘোষণার নীতিমালা একই। এসএমইদের জন্য এই নীতিমালা ৯ মাসের পরিবর্তে ১৮ মাস করা যেতে পারে।

ঋণের সুদ পরিশোধের বিষয়ে জানা গেছে, ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া ঋণ উদ্যোক্তাদের পক্ষে ঋণ বিতরণকারী ব্যাংককে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে সরকার। ব্যাংকগুলো যাতে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারে, এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকা একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল এরই মধ্যে গঠন করেছে। এত কিছুর পরও এসএমইতে ঋণ দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকও। তবে, গত ২২ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের তাগিদ  দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, পাক্ষিক ভিত্তিতে এই খাতে ঋণ বিতরণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে ব্যাংকগুলোকে। যদিও সাধারণ নিয়ম হচ্ছে মাসিক ভিত্তিতে জানানো।

ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে তাদের প্রায় সব সম্পদ জামানত রাখেন ব্যাংকের কাছে। কিন্তু চলমান এই বাস্তবতায় খেলাপি হয়ে গেলে ব্যাংক টাকা আদায়ের জন্য জামানত নিলামে তুলবে। এতে ব্যবসা হারানোর পাশাপাশি সব হারিয়ে পথে বসবেন এসব উদ্যোক্তা। তাই যথেষ্ট ভেবে চিন্তেই পা বাড়ানোর পথে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা।

এই বাস্তবতায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব এসএমই দিবস ২০২০। চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব সহ দেশের বিভিন্ন সংগঠন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এজন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

Get in Touch

spot_imgspot_img

Related Articles

spot_img

Latest Posts